ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং কর্মসূচীর ফাঁদে এক তরুন যে কোন সময় স্বপরিবারে আত্মহত্যার আশঙ্কা
নওগাঁ : ষ্টান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেড-এর এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রমের আওতায় আউটলেট শাখা’র ফাঁদে পড়ে সর্বশান্ত হয়ে দিশেহারা জীবনযাপন করছেন নওগাঁ’র এক তরুন উদ্যোক্তা।
যে কোন মুহুর্তে স্ত্রী ও একমাত্র শিশু সন্তান নিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়ার চিন্তায় এখন মগ্ন তিনি।
নওগাঁ প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কান্নাজড়িত কন্ঠে এমনই আকুতি জানালেন সর্বহারা তরুন মোঃ ওয়াজেদ আলী।
ডিপ্লোমা ইঞ্জনিয়ার উক্ত ওয়াজেদ আলী নওগাঁ জেলাধীন মহাদেবপুর উপজেলার কন্দর্পপুর গ্রামের মোঃ ছবেদ আলীর পুত্র।
ইন্টারনেটে বিজ্ঞপ্তি দেখে ষ্টান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেড-এর এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রমের আওতায় আউটলেট ব্র্যাঞ্চ খোলার জন্য আবেদন করেন। সেই অনুযায়ী ঐ ব্যাংকের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট (এসইভিপি) ও হেড অফ এজেন্ট ব্যাংকিং এ এফ জামাল উদ্দিনের সাথে দেখা করে কথা বলেন। তিনি তাকে এই শাখা খোলার পরামর্শ দিয়ে বলেন এটি করলে তার আর কোন চাকুরীর দরকার হবে না। প্রতিমাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা এমনিতেই আয় হবে। তাঁর কথামত তিনি এই প্রক্রিয়া শুরু করেন। সাপাহার উপজেলা সদরে এই ব্যাংকিং শাখা চেয়ে চাহিদামত কাগজপত্র জমা দেন। পরবর্তীতে ব্যাংক কর্ত্তৃপক্ষের উদ্যোগে এলাকায় কয়েকদফা অডিটের মাধ্যমে অন্যন্য মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থান নিরুপন করে। এতে এলাকায় এই কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব বলে প্রতীয়মান হয়। উক্ত ওয়াজেদ আলীর ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক অবস্থান সম্পর্কে পুলিশী তদন্ত সম্পন্ন হয়। সবকিছু সন্তোষজনক হওয়ায় তাকে সাপাহার উপজেলা সদরে জিরো পয়েন্ট, জয়পুর ব্র্যাঞ্চ নামে এই এজেন্ট শাখা খোলার অনুমোদন প্রদান করা হয়। ব্যাংকের হেড অফ এজেন্ট ব্যাংকিং এ এফ জামাল উদ্দিন ও ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোঃ মোতালেব হোসেন স্বাক্ষরিত এসবিএল/এবিডি/এইচও/এজেন্ট-২১/২০১৭/১৬৫তারিখ ২ অক্টোবর ২০১৭ মোতাবেক উক্ত ওয়াজেদ আলীর অনুকুলে এজেন্ট ব্যাংকিং শাখা খোলার অনুমোদনসহ নিয়োগ প্রদান করা হয়।
এরই প্রেক্ষিতে শর্ত অনুযায়ী নিজ খরচে মাসিক ১০ হাজার টাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে সেখানে অত্যাধুনিক ব্যাংকিং সুযোগ সুবিধা সৃষ্টির জন্য ডেকোরেশন করেন। সেখানে মিনি ভল্ট, ক্যাশ কাউন্টারের সন্নিকটে একটি আয়রন সেলফ, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মডার্ন প্রিন্টার, স্ক্যানার, ফিংগার প্রিন্ট ডিভাইস, জাল নোট সনাক্তকারী মেশিন, নোট গননা মেশিন এবং অন্যান্য বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম স্থাপন করেন। এতে তার নিজস্ব প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা খরচ হয়। নগদ টাকা না থাকায় যেটুকু জমি ছিল তার সব বিক্রি করে তিনি এই ডেকোরেশনের কাজটি করেন।
সব কিছ যখন প্রস্তুত এবং ১৫ জুলাই শাখাটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হওয়ার কথা ঠিক সেই মুহুর্তে রহস্যজনকভাবে ব্যাংক কর্ত্তৃপক্ষ তাকে জানিয়ে দেয় যে ঐ শাখাটি আর হচ্ছে না। এমন অবস্থায় ওয়াজেদ আরী মারাত্মকভাবে আশাহত হয়ে পড়েন। পাগলের মত হয়ে যায়। অসংলগ্ন অবস্থায় সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে একসাথে আত্মহত্যার প্রস্তুতিও নেয়। এই ভয়ে একমাত্র শিশু সন্তানসহ স্ত্রী পিতার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে।
অসহায় বিপর্যস্ত এই তরুন ওয়াজেদের অবস্থার কথা শুনে এলাকার সচেতন জনমনে ষ্ট্যান্ডার্ড ব্যাং সম্পর্কে নেতিবাচক ধারনার সৃষ্টি হয়েছে। তাঁরা পরিবারটিকে নিশ্চিত ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য প্রশাসনের নিকট এই ঘটনার বিচার দাবী করেছেন।
কোন মন্তব্য নেই