Header Ads

বদলগাছীতে সমবায় সমিতির আড়ালে চলছে সুদের রমরমা ব্যবসা ।। সর্বশান্ত হচ্ছে এলাকার মানুষ (ভিডিও)

মোঃ সানজাদ রয়েল সাগর,  বদলগাছী : নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার বিলাসবাড়ী ইউনিয়নে বাঙ্গের ছাতার মতো তৈরী হয়েছে সমবায় সমিতি আর এই সমবায় সমিতিগুলোর আড়ালে চলছে সুদের রমরমা ব্যবসা। নিয়মকে ওপেক্ষা করে ঐ সব সমবায় সমিতির রেজিস্টেশন করে দেওয়া হয়েছে। আর ঐ সব এলাকার লোকজন বিপদে পরে মোটা অংকের লভাংশের বিনিময়ে ঐ সব সমবায় সমিতি থেকে টাকা নিয়ে সর্বশান্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। অপরদিকে সমবায় সমিতির মালিকদের অভিযোগ মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আমাদের রেজিষ্টেশন করে দিয়েছে উপজেলা সমবায় অফিস।
সরেজমিনে গিয়ে দেখাযায়, বিলাসবাড়ী ইউনিয়নের দ্বীপগঞ্জ ,বারফালা, হাজীপুর, পারসোমবাড়ী, চকাবীর ও শ্রীরামপুর সহ ছোট ছোট বাজারে বাঙ্গের ছাতার মতো শাড়ি শাড়ি ভাবে গড়ে উঠেছে সমবায় সমিতি নামক এনজিও।

 এরমধ্যে দ্বীপগঞ্জ বাজারে রয়েছে, সবুজ বাংলা কৃষি সমবায় সমিতি, গ্রাম-বাংলা সমবায় সমিতি, সমতা সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতি, স্বনীরভর গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতি, সোনালী কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতি, মুক্তধারা সমবায় সমিতি, সমাধান কৃষি পন্য সমবায় সমিতি , সেতু বন্ধন সমবায় সমিতি, সততা সমবায় সমিতি সহ আরো রয়েছে ৪ থেকে ৫ টি সমবায় সমিতি। বারফালা নামক বাজারে রয়েছে, যমুনা কৃষি পণ্য সমবায় সমিতি, প্রত্যাশা কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতি, বারফালা সমবায় সমিতি। পাড়সোমবাড়ী বাজারে রয়েছে, পল্লী উন্নয়ন সঞ্চয় ও ঝৃনদান সমবায় সমিতি, বন্ধন কৃষি পণ্য উৎপাদন করী সমবায় সমিতি, প্রজাপতি সমবায় সমিতি, সেবা সমবায় সমিতি, সুর্যমূখী সমবায় সমিতি, প্রতিশ্রুতি সমবায় সমিতি । হাজীপুর নামক স্থানে রয়েছে উদয়ন সমবায় সমিতি । লক্ষিপুর নামক স্থানে রয়েছে শাপলা কৃষি পণ্য উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি, চকআবীর নামক স্থানে শাখা অফিস পূর্নতা সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতি । মহেশপুর নামক স্থানে সততা কৃষিপণ্য উৎপাদনমূখী সমবায় সমিতি সহ রয়েছে আরো অনেক সমবায় সমিতি।
এলাকাবাসী জানায়, আমাদের এই ইউনিয়নে যতোগুলোন সমবায় সমিতি নামে এনজিও রয়েছে তাঁর সবগুলোর আড়ালে চলাছে সুদের ব্যবসা। এসব সংস্থা থেকে এলাকার মানুষ বিপদে পরে মাসিক হাজারে ১০০ টাকা সুদের বিনিময়ে লাখ লাখ টাকা গ্রহন করে আজ সর্বসান্ত হতে বসেছে। সুদের টাকা দিতে দেরী হলে প্রদর্শন করা হয় ঐ সব লোকদের বিভিন্ন ধরনের হুমকী ।  সুদের টাকা দিতে না পাড়ায় আবার কেই কেউ হয়েছে বাড়ী ছাড়া।
 এসব সমবায় সমিতি থেকে সুদের টাকা নিয়ে আজ সর্বসান্ত বিলাসবাড়ী ইউনিয়নের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধীক ব্যক্তির সাথে কথা বললে তাঁরা অভিযোগ করে বলেন, আমরা বিপদে পরে এসব সমবায় সমিতি থেকে মাসিক হাজারে ১শত টাকা হারে সুদের উপর টাকা নিয়ে ঠিক সময় মতো মাসের পর মাস সুদের টাকা দিয়ে এসেছি। সংসারের অভাবের কারনে সুদের টাকা দিতে একটু দেরি হলে তাঁরা বিভিন্ন ধরনের হুমকী প্রদান সহ আমাদেরকে ধরে নিয়ে আটকে রেখে টাকা আদায় করেন । কেউ তাঁদের এই আচরনের জন্য প্রতিবাদ করতে এলে তাঁদেরকেও হুমকী প্রদান করেন ঐ সব সমবায় সমিতির লোকজন।
অনুসন্ধানে গিয়ে বারফালা গ্রামের যমুনা কৃষি পণ্য উৎপাদনকারী সমবায় সমিতির অফিসে গিয়ে দেখাযায়, সমিতির পার্টনার রশিদ ও সমিতির ম্যানেজার ও এক মাঠ কর্মী ঐ এলাকার রুমী নামের এক মহিলার স্বামীকে আটকে রেখে হুমকী প্রদান করে ও সুদ সহ মূল টাকা আদায় করে নিচ্ছেন।
এ বিষয়ে রুমীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আজ থেকে ৭ মাস আগে সংসারে অভাবের কারনে এই সমিতি থেকে হাজারে ১ শত টাকা হারে মাসিক সুদের বিনিময়ে ৪ হাজার টাকা নিয়ে ছিলাম। অভাবের কারনে সুদের টাকা না দিতে পারায় আজ আমার স্বামীকে ধরে নিয়ে এসেছিলো। তাই খবর পেয়ে আরেক জনের কাছ থেকে টাকা হাওলাত করে এনে আসল ৪ হাজার টাকা ও ৭ মাসের সুদ ২৮০০ শত টাকা সহ মোট ৬ হাজার ৮ শত টাকা পরিশোধ করলাম।
বিলাসবাড়ী ইউনিয়নের দ্বীপগঞ্জ বাজারে অবস্থিত সোনালী কৃষি পণ্য সমবায় সমিতি নামক অফিসে এই প্রতিবেদক অন্য পরিচয়ে সুদের টাকা দিবেন কিনা বলে প্রশ্ন করলে সমিতির মালিকের স্ত্রী শিল্পি বেগম জানান, মাসিক হাজারের ১০০টাকা লাভের বিনিময়ে আমরা সুদের টাকা দিয়ে থাকি। আপনি কবে নিবেন বলবেন আমরা টাকা দিব।
সুদের টাকা বিষয়ে কোলা ইউপির মেম্বার হারুন বলেন, আমি প্রায় ৪ বছর আগে দ্বীপগঞ্জ বাজারে অবস্থিত সেতু বন্ধন নামক সমবায় সমিতির এনজিও থেকে ২৫ হাজার টাকা মাসিক ২৫০০টাকা সুদের বিনিময়ে গ্রহন করে এই ৪৮ মাস পর্যন্ত ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা সুদ দিয়েছি । এখনো পর্যন্ত আমি আসল ২৫ হাজার টাকা পরিশোধ করেতে পারিনি।
একাধীক সমবায় সমিতি নামক এনজিও থেকে সুদের উপর টাকা নিয়ে আজ প্রায় সর্বশান্ত হয়ে পড়েছেন বিলাশবাড়ী গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হকের ছেলে নূর মোহাম্মদ তাঁর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমি ব্যবসা করতাম বিপদে পরে মাসিক ১০০ টাকা সুদের উপর দ্বীপগঞ্জ বাজরের আব্দুর রশিদের সমবায় সমিতি থেকে ৫০ হাজার টাকা সুদের টাকা নিয়েছি, বিজয় নামক সমবায় সমিতি থেকে চার/পাঁচ মাস আগে ১লক্ষ টাকা সুদের উপর  নিয়েছি এবং নিয়মিত লাভ দিয়ে আসছি , শাপলা কৃষি পণ্য উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি থেকে ৬০ হাজার টাকা নিয়ে সুদের টাকা দিয়ে আসছি,  আলোর দিশারী সঞ্চয় ও ঝণদান সমাবায় সমিতি থেকে ৮০ হাজার টাকা সুদের উপর নিয়েছিলাম ১৮ মাস ধরে লাভ দিয়েছি এবং ৫০ হাজার টাকা আসল টাকা দিয়েছি এখন আমার কাছ থেকে ৩২ হাজার টাকা পাবে তিন মাস থেকে লাভ না দিতে পারায় কয়েকদিন আগে আমাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল, পূর্নতা সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতি থেকে ১৮ মাস আগে ৩০ হাজার টাকা নিয়েছি এবং এই ১৮ মাসে ৫৪ হাজার টাকা শুধু লাভ দিয়েছি কিন্তু এখন পর্যন্ত আসল টাকা দিতে পারিনি, সমতা সমবায় সমিতি থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে ২৫ হাজার টাকা লাভ দিয়েছে এখন অভাবের কারনে টাকা না দিতে পারায় এখন আমাকে বিভিন্ন ধরনের হুমকী প্রদান করছে, গ্রাম বংলা সমবায় সমিতি থেকে ২০ হাজার টাকা নিয়েছি। অভাবের করনে গত ২/৩ মাস ধরে লাভের টাকা না দিতে পারায় আমাকে তুলে নিয়ে যাওয়া সহ বিভিন্ন ধরনের হুমকী দিচ্ছে বলে জানান।
সমবায় সমিতি থেকে সুদের টাকা দেওয়া যাবে কিনা বিষয়ে একাধীক সমবায় সমিতির মালিকের সাথে কথা বললে তাঁরা সুদের টাকা দেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন , আমরা কিছু বেশি লাভের আশায় এসব টাকা দিয়ে থাকি। এসব সমবায় সমিতি থেকে সুদের ব্যবসা করার দায়ে যদি আপনাদের রেজিষ্টেশন বাতিল করে বলে প্রশ্ন করলে তাঁরা বলেন, আমরা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সমবায় অফিস থেকে এসব সমবায় সমিতির রেজিষ্টেশন করে নিয়েছি। এবং তাঁরা কেউ কেউ এই বিষয়টি জানেন। তাই তাঁর আমাদের কিছুই বলবেনা।
বিলাসবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যার সাইদুর রহমান কেটু বলেন, বর্তমান আমার এই ইউনিয়নে বাঙ্গের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে সমবায় সমিতি নামক এনজিও। আর এসব এনজিও থেকে প্রদান করা হচ্ছে এলাকার মানুষকে মাসিক সুদের উপর লাখ লাখ টাকা। আর এতে করে সুদের টাকা দিতে দিতে সর্বশান্ত হচ্ছে এলাকার মানুষজন । আবার কেউ কেউ সুদের টাকা দিতে না পারায় এলাকা থেকে পালিয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, আমার এই একটি ইউনিয়নে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ টি সমবায় সমিতি নামক এনজিও রয়েছে। তারপরও আবারো নতুন করে একের পর এক সমবায় সমিতি নামক রেজিষ্টেশান করে দিচ্ছে উপজেলা সমবায় অফিস।
উপজেলা সমবায় অফিসার লুৎফর রহমানের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমি শুনেছি ঐ ইউনিয়নের অনেক সমবায় সমিতি আড়ালে সুদের ব্যবসা করছে। আপনি জানলেও তাঁদের বিরুদ্ধে এখনো কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেননি কেন বলে প্রশ্ন করলে তিনি কোন সদ উত্তর প্রদান করেননি। সমিতির মালিকরা বলছেন মোটা অংকের টাকার বিনিময়েই তাঁদের আপনি রেজিষ্টেশন  করে দিয়েছেন বলে অপর প্রশ্নের কোন উত্তর প্রদান করেননি।
এ বিষয়ে জেলা সমবায় অফিসার আতাউর রহমান বলেন, আমার কাছে বা আমার টেবিলে সমবায় রেজিষ্টেশন করতে কোন টাকা লাগেনা। আর এ সব সমবায় সমিতির মালিকরা বলছেন এক একটি সমবায় সমিতি রেজিষ্টেশন করতে সমবায় অফিসে ২০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত তাঁদের উৎকচ দিতে হয়েছে বলে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আপনি এ বিষয়ে উপজেলা সমবায় অফিসারের সাথে কথা বলেন।
 এই এলাকাবাসীকে সর্বশান্তের হাত থেকে বাঁচাতে হলে এসব সমবায় সমিতির রেজিষ্টেশন বাতিল করে তাঁদের কর্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া একান্ত প্রয়োজন বলে মনে করেন এলাকার সচেতন মহল

                                                 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.