Header Ads

ভালবাসা দিবসের ইতিহাস ও আমাদের দেশে আবির্ভাব





আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি। বিশ্ব ভালবাসা দিবস।  ভ্যালেন্টাইন্স ডে।  দিনটিকে বিশ্ব ব্যাপী ভালবাসা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। প্রেমিক-প্রেমিকা, বন্ধ-বান্ধব, স্বামী-স্ত্রী, মা-সন্তান, ছাত্র-শিক্ষক সহ বিভিন্ন বন্ধনে আবদ্ধ মানুষেরা এই দিনে একে অন্যকে তাদের ভালবাসা জানায়। বর্তমানে সমগ্র বিশ্বে এই দিনটিকে খুবই ঘটা করে আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে পালন করা হয়।


এই দিবসটি যুক্তরাষ্ট্র বা পাশ্চাত্য সমাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। তবে বর্তমানে এই দিবসটি বিশ্ব ব্যাপী দেশে দেশে আনন্দ উন্মাদনার সাথে পালন করা হয়। আমরা অনেকেই এই দিবসটি পালন করে থাকি তবে আমরা অনেকেই জানিনা এই দিবসটি কিভাবে বা কোথা থেকে আসলো।

প্রাচীন রোমে ১৪ ফেব্রুয়ারি ছিল রোমান দেব-দেবীর রানী জুনোর সম্মানে ছুটির দিন। জুনোকে নারী প্রেমের দেবী বলে লোকে বিশ্বাস করত। কারো করোমতে ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস হওয়ার কারণ ছিল এটিই। আবার কেউ বলেন, রোমের সম্রাট ক্লডিয়াস ২০০ খ্রিস্টাব্দে দেশে বিয়ে প্রথা নিষিদ্ধ করেন। তিনি ঘোষণা দেন, আজ থেকে কোনও যুবক বিয়ে করতে পারবে না। যুবকদের জন্য শুধুই যুদ্ধ। তার মতে, যুবকরা যদি বিয়ে করে তবে যুদ্ধ করবে কারা? সম্রাট ক্লডিয়াসের অন্যায় ঘোষণার প্রতিবাদ করেন এক যুবক। যার নাম ভ্যালেন্টাইন। অসীম সাহসী এযুবকের প্রতিবাদে খেপে উঠেছিলেন সম্রাট। রাজদ্রোহের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় তাকে। ১৪ ফেব্রুয়ারি ভোরবেলা মাথা কেটে ফেলা হয় তার। ভালোবাসার জন্য ভ্যালেন্টাইনের আত্মত্যাগকে স্মরণ করতে তখন থেকেই দিনটিকে পালন করা হয় ভ্যালেন্টাইন দিবস হিসেবে।

তবে এটিও সর্বজন স্বীকৃত নয়। এখানেও দ্বিমত আছে। কারও কারও মতে, প্রাচীন রোমে ভ্যালেন্টাইন নামে একজন চিকিৎসক ছিলেন। তিনি রোগীদের প্রতি ছিলেন ভীষণ সদয়। অসুস্থ মানুষের ওষুধ খেতে কষ্ট হয় বলে তিনি তেঁতো ওষুধ ওয়াইন, দুধ বা মধুতে মিশিয়ে খেতে দিতেন। সেই ডাক্তার খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেন। প্রাচীন রোমে খ্রিস্টধর্ম তখন মোটেও জনপ্রিয় ছিল না। এই ধর্মে বিশ্বাসীদের শাস্তি দেওয়া হতো। একদিন রোমের এক কারা প্রধান তার অন্ধ মেয়েকে ভ্যালেন্টাইনের কাছে নিয়ে এসেছিলেন চিকিৎসার জন্য। ভ্যালেন্টাইন কথা দিয়েছিলেন তিনি তার সাধ্যমতো চিকিৎসা করবেন। মেয়েটির চিকিৎসা চলছিল এমন সময় হঠাৎ একদিন রোমান সৈন্যরা এসে ভ্যালেন্টাইনকে বেঁধে নিয়ে যায়। ভ্যালেন্টাইন বুঝতেপেরেছিলেন, খ্রিস্টান হওয়ার অপরাধে তাকে মেরে ফেলা হবে। ২৬৯ খ্রিষ্টাব্দে বা কারও মতে ২৭০খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি রোম সম্রাট ক্লডিয়াসের আদেশে ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তার আগে ভ্যালেন্টাইন অন্ধ মেয়েটিকে বিদায় জানিয়ে একটি চিরকুট লিখে রেখে গিয়েছিলেন। তাকে হত্যার পর কারা প্রধান চিরকুটটি দিয়েছিলেন মেয়েটিকে। তাতে লেখা ছিল, ‘ইতি তোমার ভ্যালেন্টাইনমেয়েটি চিরকুটের ভেতরে বসন্তের হলুদ ত্রৌকস ফুলের আশ্চর্য সুন্দর রং দেখতে পেয়েছিল কারণ, ইতোমধ্যে ভ্যালেন্টাইনের চিকিৎসায় মেয়েটির অন্ধ দুচোখে দৃষ্টি ফিরে এসেছিল। ভালবাসার এসব কীর্তির জন্য ৪৯৬ খ্রিস্টাব্দে পোপ জেলাসিয়ুস ফেব্রুয়ারির ১৪ তারিখকে ভ্যালেন্টাইন্স ডে হিসেবে ঘোষণা করেন। সেই থেকে এই দিনটিকে মানুষেরা ভ্যালেন্টাইন্স ডে হিসেবে পালন করে আসছে।

ভ্যালেন্টাইন্স ডে উৎপত্তির বিষয়ে আরেকটি সম্পূর্ণ ভিন্নমত রয়েছে। এই মতের লোকেরা বলেন, ভ্যালেন্টাইনের সঙ্গে প্রিয়জনকে ভালোবাসার বার্তা পাঠানোর আদৌ কোনও সম্পর্ক নেই। প্রাচীনকালে মানুষের বিশ্বাস ছিল, ১৪ ফেব্রুয়ারি হলো পাখিদের বিয়ের দিন। পাখিরা বছরের দ্বিতীয় মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ডিম পাড়তে বসে। আবার কেউ বলেন, মধ্যযুগের শেষদিকে মানুষ বিশ্বাস করত এদিন থেকে পাখিদের মিলন ঋতু শুরু হয়। পাখিরা সঙ্গী খুঁজেবেড়ায়। পাখিদের দেখাদেখি মানুষও তাই সঙ্গী নির্বাচন করে দিনে।

৪৯৬ খ্রিষ্টাব্দে ভ্যালেন্টাইন্স ডে উদ্ভব হলেও এটি বিশ্বব্যাপী প্রথম দিকে তেমনিভাবে প্রচার প্রসার লাভ করেনি। পাশ্চাত্যের ক্ষেত্রে জন্ম দিনের উৎসব,ধর্মোৎসব সবক্ষেত্রেই ভোগের বিষয়টি মুখ্য। তাই গির্জা অভ্যন্তরেও মদ্যপানে তারা বিরত থাকে না। খ্রিস্টীয় চেতনা ভ্যালেন্টাইন দিবসের কারণে বিনষ্ট হওয়ার অভিযোগে ১৭৭৬ সালে ফ্রান্স সরকার ভ্যালেন্টাইন্স উৎসব নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ইংল্যান্ডে ক্ষমতাসীন পিউরিটানরাও একসময় প্রশাসনিক ভাবে দিবস উৎযাপন করা নিষিদ্ধ করেছিল। এছাড়া অস্ট্রিয়া,হাঙ্গেরি জার্মানিতে বিভিন্ন সময়ে দিবসটি জনগণ সরকারিভাবে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল।

বর্তমান সময়ে এসে ভ্যালেন্টাইন্স দিবসের কদর প্রবল ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে পাশ্চাত্যে উৎসব মহাসমারোহে উদযাপন করা হয়। যুক্তরাজ্য যুক্তরাষ্ট্রের মানুষেরা এই দিবস উপলক্ষে এই দিনে প্রায় কয়েক কোটি ডলার ব্যয় করে। ভালবাসা দিবসের জন্য মানুষেরা কার্ড, ফুল, চকোলেট অন্যান্য উপহার সামগ্রী ক্রয় করে। যুক্তরাষ্ট্রে এই দিনে প্রায় আনুমানিক কোটি শুভেচ্ছা কার্ড আদান-প্রদান করা হয়।

আমাদের দেশে দিনটির শুরু :
১৯৯৩ সালের দিকে আমাদের দেশে ভালোবাসা দিবসের আবির্ভাব ঘটে। সাংবাদিক ব্যক্তিত্ব শফিক রেহমান পড়াশোনা করেছেন লন্ডনে। পাশ্চাত্যের রীতিনীতিতে তিনি ছিলেন অভ্যস্ত। দেশে ফিরে তিনিই ভালোবাসা দিবসের শুরুটি করেন। নিয়ে অনেক ধরনের মতবিরোধ থাকলেও শেষ পর্যন্ত শফিক রেহমানের চিন্তাটি নতুন প্রজন্মকে বেশি আকর্ষণ করে। সে থেকে এই আমাদের দেশে দিনটির শুরু। 

তথ্য সংগ্রহ : এ.কে.সাজু
সম্পাদক
বরেন্দ্র সংবাদ

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.