Header Ads

বদলগাছীতে কৃষিজমি ও জনবসতি এলাকায় একের পর এক ইটভাটা নির্মাণ ; প্রশাসন নিরব


 মোঃ  সানজাদ রয়েল সাগর, নওগাঁ :     নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার কৃষিজমি ও জনবসতি এলাকায় একের পর এক ইটভাটা নির্মাণ হলেও প্রশাসনের ভুমিকা নিরব। এসব ইটভাটার নেই কোন অনুমোদন, নিবন্ধন  ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রও। তারপরও অনুমোদন ছাড়াই একের পর এক নতুন ইটভাটা নির্মাণ করেই চলছে। ওইসব ইটভাটাগুলোর মালিক প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্তাব্যক্তিদের ম্যানেজ করে ইটভাটাগুলো নির্মাণ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। একারণে নতুন নির্মাণকৃত ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাও নেওয়া হয় না বলে অভিযোগ উঠেছে।  এলাকাবাসীর অভিযোগ প্রশাসনের কাছে ঐসব অবৈধ্য ইটভাটা বন্ধের জন্য বারবার অভিযোগ দিলেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়না।

    নওগাঁ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ব্যবসা ও বাণিজ্যে শাখা থেকে জানাযায়, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বসতবাড়ী সংলগ্ন ফসলী জমিতে এবং অনান্য জায়গায় ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ এর পরিপন্থিমূলক এবং পরিবেশের ছাড়পত্র ব্যতিরেখে ইটভাটা লাইসেন্স গ্রহন না করে ইটভাটা নির্মাণ করা হচ্ছে । যা ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ তাই নতুন করে নির্মাণধীন অবৈধ্য ইটভাটা বন্ধের আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য গত ১৭/৯/২০১৭ ইং তারিখে ০৫.৬৪০০.১২২.০২.০০২.১৭-২৪১ নং স্বারকে একটি পত্র বদলগাছী নির্বাহী অফিসার বরাবর নওগাঁ জেলার ব্যবসা ও বাণিজ্য শাখার সহকারী কমিশনার আবদুল্লাহ আল মামুন প্রেরন করেন।  তাঁরপরও উপজেলা নির্বাহী অফিসার ঐসব নির্মাণধীন ইটভাটার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেননি।
পরিবেশ আইনে বলা হয়েছে, জনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকা, কৃষিজমি, বাজার, স্কুল, কলেজ এলাকায় ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। ধোঁয়াবিহীন ইট পোড়াতে হবে। কৃষি জমি থেকে কোন মাটি কেটে  নেওয়া যাবে না ও এলজিডির রাস্তা ব্যবহার করা যাবেনা। এছাড়া ইট পোড়ানোর কাজে জ্বালানী হিসেবে কাঠ ব্যবহার করলে তিন বছরের কারাদ- ও  তিন লাখ টাকার জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
সম্প্রতি সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, আধাইপুর ইউনিয়নের মির্জাপুর নামক মাঠে একটি ও বিষœপুর মাঠে আর একটি নতুন ইটভাটা নির্মাণ করা হচ্ছে।  মিঠাপুর ইউনিয়নের মিঠাপুর মাঠে একটি ও খাদাইল বাজারের পূর্ব পার্শ্বে একটি নতুন ইটভাটা নির্মাণ করা হয়েছে। মথুরাপুর ইউনিয়নের থুপশহর নামক মাঠে একটি ইটভাটা নির্মাণ করেছে। পাহাড়পুর ইউনিয়নের বামনপাড়া নামক মাঠে একই স্থানে একটি ইটভাটা নির্মাণ করা হয়েছে ও আর একটি নতুন ইটভাটার নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। কোলা ইউনিয়নের শালুককুড়ি নামক মাঠের কৃষি জমিতে নির্মাণ করা হচ্ছে একটি নতুন ইটভাটা। এবং আরোও নতুন করে ২ থেকে ৩টি ইটভাটা নির্মাণ করার প্রক্রিয়া চলছে। আর এসব ইটভাটা অধিকাংশই কৃষিজমি ও জনবসতি এলাকায় গড়ে উঠেছে। এই ইটভাটাগুলোর জন্য কৃষি জমির উপরিভাগের টপসয়েল জাতীয় মাটি কেটে ইটভাটায় আনা হচ্ছে। এর মধ্যে কয়েকটিতে আগুন দিয়েছে আর বাদ বাঁকী কয়েকটি ইভাটার কাজ চলমান রয়েছে।
 এ সব ইটভাটাগুলোর মাত্র পঞ্চাশ থেকে ১ শত গজ দুরত্বেই রয়েছে জন-বসতি ও বাড়ি-ঘর । আর ওই সব ইটভাটার কারণে জনবসতি এলাকার গাছপালা ও ফসলের ক্ষতি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন সেখানে বসবাসকারী লোকজনরা।
কয়েকটি ইটভাটা সংলগ্ন  বাড়ির মালিকরা সংবাদকে জানান, ইটভাটার কারণে তাঁদের ফলজ গাছগুলো নষ্ট হয়েছে। মাঠের ফসলেরও ক্ষতি হচ্ছে। এ বিষয়টি তাঁরা স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েছিলেন। কিন্ত তাতে তাঁরা কোনো ফল পাননি।
  মির্জাপুর মাঠে নির্মাণধীন ইটভাটার মালিক দেলোয়ার বলেন,  আমি জমি লিজ নিয়ে ইটভাটা নির্মাণ করছি। কেউ আমার ওপর বিরাগভাজন হয়ে এই অভিযোগটি করেছে। ইটভাটা নির্মাণ এর জন্য আপনি কোন পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন পেয়েছেন কিনা বলে জানতে চাইলে তিনি বলেন, না কোন অনুমতি পাইনি। তাহলে কিভাবে কৃষি জমি ও জনবসতি এলাকায় আপনি ইটভাটা নির্মাণ করছেন বলে প্রশ্ন করলে তিনি কোন উত্তর প্রদান করেননি।
 এসব দৃশ্য দেখে মনে হয় দেখার জন্য আসলেই নেই কোন কর্তৃপক্ষ । নতুন করে ৮/১০ টি ইটভাটা নির্মাণ হলেও কোন প্রদক্ষেপ নেই প্রশাসনের।
 ঐসব নির্মাণধীন ইটভাটা মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অধিকাংশই ইটভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের নেই কোন অনুমোদন, ছাড়পত্র ও নিবন্ধন। এছাড়া তাঁরা উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ইটভাটাগুলো নির্মাণ করছে বলে জানান।
বদলগাছী উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম বলেন, আমাদের এই উপজেলায় এমনিতেই চাহিদার থেকে অনেক বেশি ইটভাটা রয়েছে যার ফলে এলাকার পরিবেশের ও কৃষি জমির অনেক ক্ষতি হচ্ছে তাই নতুন করে ইটভাটা আমাদের এই উপজেলায় আবারো যদি হয় তাহলে পরিবেশের মারাত্বক ক্ষতি হবে। আর কেউ যদি নতুন করে ইটভাটা নির্মাণ করে তাহলে পরিবেশ অধিদপ্তর এর অনুমোদন ছাড়া সেটি নির্মাণ করা যাবেনা। তিনি আরোও বলেন, আমরা মালিক সমিতি সিধান্ত নিয়েছি আর কোন নতুন ইটভাটা নির্মাণ করবোনা। তাই উপজেলার কৃষি জমি ও পরিবেশের কথা চিন্তা করে প্রশাসনেরও উচিৎ নতুন নির্মাণধীন ইটভাটাগুলো বন্ধ করে দেওয়া।
কৃষিজমিতে একের পর এক ইটভাটা নির্মাণ হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন উপজেলা কৃষি অফিসার হাসান আলী তিনি বলেন, বদলগাছীতে একটি ইটভাটাও নিয়মতান্ত্রিকভাবে হয়নি। তারপরও আবারোও কৃষিজমিতে নতুন করে ইটভাটা গড়ে তোলা হচ্ছে এ বিষয়টি  কৃষি সংক্রান্ত জেলা ও উপজেলা কমিটির মাসিক সভায় একাধিকবার বলা হয়েছে। ইটভাটার কারণে একদিকে কমছে কৃষিজমি অন্যদিকে মারাত্বক ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশের।
 ইটভাটায় কৃষি জমির উপরি ভাগের মাটি কাটা বিষয়ে তিনি বলেন, কৃষি জমির উপরি ভাগের টপসয়েল মাটি কাটার করণে জমির উর্বরাশক্তি কমে যায় এ কারনে সেই জমিতে তেমন কোন ফসল ভাল ফলন হয়না । এবং ঐ জমির টপসয়েল পুরুন হতে  ১২ থেকে ১৫ বছর সময় লেগে যাবে বলে জানান।
    বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাসুম আলী বেগ বলেন, নতুন করে কয়েকটি ইটভাটা নির্মাণ করা হচ্ছে বলে শুনেছি শিগগিরই ঐ সব ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এ বিষয়ে নওগাঁর জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান এর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
 এলাকার সচেতন মহল বলেন, এমনিতেই আগের ইটভাটার কালোধোঁয়ার কারনে আমাদের পরিবেশের অনেক ক্ষতি হচ্ছে তাঁর উপড় আবারো তৈরী হচ্ছে নতুন করে কয়েকটি ইটভাটা। তাঁর পরও কোন প্রশাসনই তাঁদের বিরুদ্ধে আইন গত ব্যবস্থা করছেনা । এতে করে মনে হচ্ছে নাম মাএ আমাদের দেশে আইন আছে কিন্তু  তাঁর কোন প্রয়োগ নেই বললেই চলে । তাই আমারা আমাদের এলাকায় এসব অবৈধ্য ইটভাটার কোলোধোঁয়ার হাত  থেকে এলাকার কৃষি জমি, পরিবেশ ও মানুষকে রক্ষা করতে স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর মন্ত্রনালয়ের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের হস্থক্ষেপ কামনা করছি।

                                           

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.